করোনা অতিমারী এবং লকডাউন মানুষের জীবন ও জীবিকার অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষুধা রয়েছে এবং আমরা আগামী দিনগুলিতে আশঙ্কা করছি যে অপুষ্টি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কিছু বড় কোম্পানী এই সুযোগ নিয়ে বিশাল মুনাফা অর্জন করছে।
অনাহার পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য সরকারের কাছে পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি বারবার রেশনের মাধ্যমে সকলের জন্য চাল, ডাল রান্নার তেল যাতে বিনা মূল্যে পায় তার জন্য দাবি করছে । আমরা বেশি মজুরি নিয়ে NREGA অধীনে আরও বেশি কাজ পাবার দাবি জানাচ্ছি এবং সরকারের কাছে সর্বজনীন ন্যূনতম আয়ের জন্য বলছি।
এর পাশাপাশি আমরা গঠনমূলক কার্যক্রম গ্রহণেরও পরিকল্পনা করি। পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি নদিয়া জেলায়, শান্তিপুর ব্লকের ফুলিয়া গ্রাম এ তাঁতি দের সঙ্গে ও কাজ করছে।
শান্তিপুর ব্লক টি নদিয়া জেলার আশেপাশের সবাই শান্তি ও ঐতিহ্যের নামে জানলেও, পশ্চিমবঙ্গ বাসীর কাছে জায়গাটির পরিচয় হলো শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ি। শান্তিপুরের লোকেদের প্রধান জীবিকা হলো তাঁত ।ইতিহাসে আছে ১৪০৯ সালে প্রথম গণেশ দানু সাধনদেবের সময় শাড়ি বোনা শুরু হয়, তবে বাণিজ্যিক ভাবে শাড়ি বোনা শুরু হয়েছিল রাজা রুদ্র দেবের সময় থেকে। স্বাধীনতার পরে শান্তিপুর তাঁত শিল্পের বারবড়ন্ত হয় কারণ এই সময় বাংলাদেশের তাঁতি বা তাদের পূর্বপুরুষেরা পূর্ব পাকিস্তান ও আজকের বাংলাদেশ থেকে শান্তিপুরে চলে আসে।
বর্তমানে হাতে তৈরী তাঁতের সাথে সাথে যন্ত্রের সাহায্যে ও তাঁত এর কাজ করা হয়। যন্ত্রের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় হাতে তৈরী তাঁত দিন দিন ধংসের দিকে এগোচ্ছে বলেই বলা চলে। স্থানীয় তাঁতিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, আগামী ১০ বছর পরে হয়তো হাতে তৈরী তাঁত শিল্প দেখা যাবে না তাঁত শিল্পে বেশিরভাগ বৃদ্ধ ও মহিলা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, আজকের প্রাপ্তবয়স্ক যুবক যুবতীরা এই শিল্প ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হচ্ছে। অনেকে ভিনরাজ্যে গিয়ে বিভিন্ন রকমের কাজ করে যেমন রাজমিস্ত্রীর কাজ, হোটেলের কাজ, কারখানার কাজ ইত্যাদি কারণ তাঁত শিল্পে তাদের রোজগার এতটাই কম যে ঐ আয় দিয়ে ভালো ভাবে সংসার চালানো খুব কঠিন, তাই তারা বেশি রোজগার এর আশায় বাইরে কাজ করতে যায় যাতে ভালো ভাবে সংসার চলে। বেশির ভাগ লাভ বড়ো মহাজন বা মিডিলম্যান উপভোগ করে। মহাজনেরা শ্রমিকদের কম বেতন দিয়ে কাজ করিয়ে, তাদের শোষণ করে থাকে।
সবকিছু শ্রমিকরা জানার পরেও তারা দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য মুখবন্ধ করে কাজ করে , কিন্তু করোনা অতিমারী এবং লকডাউন মানুষের জীবিকাকে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। এখানকার তাঁত শিল্পীদের কাজে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। যেসব প্রাপ্তবয়স্ক লোকেরা পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে বাইরে কাজ করতে গিয়েছিলো তারা ফিরে এসেছে নিজের গ্রামে । তাঁত শিল্প মোটামোটি ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে বলেই বলা চলে। তাঁত শ্রমিক ও বাইরে থেকে ফিরে আশা শ্রমিকরা কোনো কাজ পাচ্ছেনা। যেটুকু টাকা তারা জমিয়েছিল ভবিষ্যতের জন্য সেটাও মোটামোটি শেষ। তারা দুবেলা দুমুঠো ঠিক করে খেতে পাচ্ছেনা।
পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি শান্তিপুর ব্লকের ফুলিয়াতে ৭ জন তাঁত শ্রমিককে নিয়ে একটা দল করে তাদের তাঁত শিল্পের কাজ ও তাদের জীবিকায় যাতে কোনো খারাপ প্রভাব না হয় সেইজন্য তাদের পাশে দাড়িয়েছে। শ্রমিকরা যাতে মহাজনদের হাতে শোষিত না হয় সেইজন্য তাদের নিজেদের উপর নির্ভরশীল করার চেষ্টা করছে। শ্রমিকরা যাতে নিজেদের তাঁতে নিজেরাই কাজ করে সঠিক ভাবে উপার্জন করতে পারে তার জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মিডলম্যান বা মধ্যস্বত্বভোগীদের সরিয়ে তাঁত শিল্পীদের বিভিন্ন জেলার সেলফ হেল্প গ্রুপের সাথে সংযুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে যাতে তাঁতিদের বোনা কাপড়ে সেলফ হেল্প গ্রুপগুলি মাস্ক তৈরী করে এবং তাঁতি ও সেলফ হেল্প গ্রুপের মহিলার উভয়য়েই উপকৃত হয়।
অসংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে বাজার অর্থনীতির বিকল্প ভাবনার পদক্ষেপ হিসাবে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি আগামী দিনে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের মধ্যে আরো আদান প্রদান করা সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment