18 December 2020

পুষ্টিবাগানের মাধ্যমে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা

আমাদের সদস্যদের  ৫ টি জেলায়  (নদিয়া , উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া) পুষ্টিবাগানের  প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে । আমাদের মূল লক্ষ হলো রাসায়নিক সার, আগাছানাশক ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করে জৈবিক পদ্ধতিতে  পুষ্টিবাগান হবে প্রত্যেক সদস্যদের বাড়িতে। আমরা বাজার থেকে যে শাকসব্জি কিনে খাচ্ছি সেগুলো আসলে দেখতেই সতেজ ও পুষ্টিকর কিন্তু সেইসব আসলে আমরা বিষ কিনে খাচ্ছি,  আমরা আমাদের ছেলে মেয়েদের, বাবা মায়েদের, ও পরিবারের সকলকেই নিজের অজান্তেই দিনের পর দিন বিষ খাওয়াছি। আমরা টাকা দিয়ে বাজার থেকে বিষ এনে খাচ্ছি সেই বিষ খেয়ে যখন আমরা অসুস্থ হচ্ছি বিভিন্ন রোগে ভুগছি তখন আবার টাকা দিয়ে হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছি চিকিৎসার জন্য। 

আসলে আমাদের দেশে সনাতনী কৃষি ব্যবস্থা ছিল, যেটা এতটাই ভাল ছিল যে ব্রিটিশ কর্মীরও এই সনাতনী কৃষি বাবস্থাকে প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছিল। এই কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার নামে পরিবর্তন করে বাজার নির্ভর করা হয়। আমাদের সনাতনী কৃষি ব্যবস্থাকে সরিয়ে ব্রিটিশদের এই কৃষি ব্যবস্থাকে প্রধান কৃষি ব্যবস্থা বলে মানা হল। আর এখন আমরা আমাদের আগের কৃষি ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাইছি তখন আমাদের বলতে হচ্ছে আমরা বিকল্প চাষ করতে চাইছি। পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি পুষ্টিবাগানের মত ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে আবার আগের কৃষি পদ্ধতিতে অর্থাৎ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফিরে যেতে চাই। 

আজকের অর্থনীতি মানুষকে ঘর থেকে বাজার দিকে নিয়ে যায় আমরা চাইছি মানুষকে বাজার থেকে ঘরমুখী নিয়ে আসতে যেমন রাসায়নিক পদ্ধতিতে চাষের যে ফসল, সবজি খেয়ে আমরা অসুস্থ হয় তারপর আবার হাসপাতালে যাচ্ছি চিকিৎসার জন্য, এই চক্র পরিবর্তন করে আমরা চাইছি আমাদের সদস্যদের বাজারমুখী না করে নিজেদের খাবার অন্তত নিজেরাই তৈরী করুক প্রাকৃতিক বা জৈবিক পদ্ধতিতে, যার ফলে তারা বাজারে যাবে না, রোগ কম হবে তারা নিজেরাই তাদের ওষুধের জন্য মেডিসিন গার্ডেন বানাবে। নিজেদের উপর স্বনির্ভর হবে। 

 আগে যখন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছিলনা তখনও আমাদের দেশে চাষ হতো। তখনকার মানুষরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে, জৈবিক পদ্ধতিতেই চাষ বাস করত। কিন্তু কিছু বড় কোম্পানি নিজেদের লাভের জন্য আমাদের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বাবহার করতে শেখাল বেশি ফলনের লোভ দেখিয়ে। এই রাসায়নিক পদ্ধতিতে চাষ আমাদের কৃষি বাবস্থাকে আসতে আসতে নষ্ট করে দিচ্ছে। মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে, বিভিন্ন রকম পোকা মাকড় উপদ্রব বাড়ছে, নানান রকমের রোগ হচ্ছে মানুষের।  বেশি পরিমাণ রাসায়নিক সার বাবহারের ফলে ফুসফুস, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করে এছাড়াও ক্যান্সার ও হতে পারে। যখন রাসায়নিক সার ছড়ায় তখন এটা বাতাসের সাথে মিশে বায়ু দূষণ করে যার জন্য বিভিন্ন রকম অসুবিধা হয় যেমন শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, ত্বক ও চোখের ক্ষতি করে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বৃষ্টির জলের সাথে গড়িয়ে  পুকুরের জলে মিশে জল দূষণ করে যা পুকুরে থাকা মাছ, জলজ উদ্ভিদ, মানুষ ও গৃহপালিত পশুদের ক্ষতি করে। বেশি পরিমাণ রাসায়নিক সারের বাবহারের ফলে মাটির অম্লত্ব বেড়ে যায় যার ফলে ফলন কম হয়, মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং মাটির মধ্যে থাকা নানান জীবাণু ও বন্ধু পোকা বিলুপ্ত হয়ে যায়।  

করোনা অতিমারীর জন্য লোকেরা কাজ হারিয়েছে কোনো কাজ পাচ্ছে না আর অন্যদিকে বাজারে শাক  সব্জি দাম আকাশ ছুল বলে। আগে ১০০ টাকা নিয়ে গেলে বিভিন্ন রকম শাক সব্জি কিনে ঝোলা ভর্তি হয়ে যেত, এখন তার দ্বিগুণ টাকাতেও কিছু হবে না।


 পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি সেইজন্য সদস্যদের বাজারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে পুষ্টিবগানের মাধ্যমে নিজদের ওপর নির্ভরশীল হতে বলছে ও সাহায্য করছে। পুষ্টিবাগানের জন্য বড় কোনো জায়গা বা জমির দরকার নেই। ঘরের সামনে, আশেপাশে বা পেছনে পুষ্টিবাগান করা যেতে পারে, এছাড়াও উঠোনে বস্তা, প্লাস্টিকের বোতল, টব ইত্যাদি দিয়ে করা যায়।

পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতির প্রশিক্ষকরা সদস্যদের পুষ্টিবাগান বানানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ও তদারকি করছে। আমাদের লক্ষ ৬২০০ পরিবারকে রবি ফসলের  বীজ,  প্রশিক্ষণ ও সমস্ত রকম সাহায্য করা, যাতে তারা পুষ্টিবাগান করে। এখন অবদি ৫৮০০ পরিবারকে প্রশিক্ষণ ও বীজ দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই জৈবিক পদ্ধতিতে পুষ্টিবাগান করেছে। আমাদের এই বছরে সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬৫০০০-৭০০০০ হবে, আমরা আসতে আসতে সমস্ত সদস্যদের পরিবারকে পুষ্টিবগান করতে সাহায্য করবো, যাতে আমাদের  সদস্যদের পরিবার সুস্থ থাকে ও বাজারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের ওপর নির্ভরশীল হয়। এছাড়াও আমাদের লক্ষ হলো দীর্ঘ মেয়াদী মাটির উর্বরতা বজায় রাখা, ফেলে দেওয়া বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার করা, দূষণ মুক্ত পরিবেশ, বাজার নির্ভরতা হ্রাস ও খাদ্য নিরাপত্তা।

আগের পদ্ধতিতে ফিরতে হয়তো আমাদের ফলন, লাভের পরিমাণ কমে যাবে কিন্তু আমাদের পরিবেশ, কৃষি ব্যবস্থা ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে গেলে আমাদের আগের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফিরে যেতে হবে। অনেক শত্রু যারা আমাদের নিজের স্বার্থের জন্য  বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু আমরা আরও অনেক লড়াই যেমন একসাথে লড়ে জিতেছি তেমন এটাও আমরা একসাথে লড়াই করব আর জিতবো।

No comments:

Post a Comment